Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার ঐতিহ্য

রায়পুর জিনের মসজিদ

প্রায় ২শ’ বছর আগের কথা। তখন মেঘনা ও খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর মোহনা লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ছিল জনবিরল বিশাল চরাঞ্চল। সময়ে সময়ে এখানে আগমন ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহান কিছু ধর্ম সাধকদের। বলা হয় বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে এই এলাকাকে কেন্দ্র করে।

এই সময় রায়পুরের এক সম্ভ্রান্তমুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ্। সময়টি ছিল বাংলা ১২৩৫ সা। ইংরেজি ১৮২৮ সাল প্রচন্ড ধার্মিক পরিবারের জন্ম নেয়া আব্দুল্লাহ নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ভারত পাড়ি জমান। সেখানে দারুল উলুম দেওবন্দ মাত্রাসায় ভর্তি হন। দেওবন্দে দীর্ঘ ১৭ বছর অভিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও দ্বীনি শিক্ষালাভ করেন।

ভারতে পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশে ফেরার পথে তিনি কিছুদিন দিল্লীতে অবস্থান করেন। এ সময় দিল্লী শাহী জামে মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও শৈল্পিক অবয়ব তাকে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশে ফিরে অনুরূপ একটি মসজিদ নর্মিাণের স্বপ্ন ও ইচ্ছা তার অন্তরে দোয়া দেয়। তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছা শক্তিকে লাগিয়ে নিজ এলাকায় এসে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদ নির্মাণে অগ্রসর হন। ধেখতে দেখতে তিনি দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনার ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ এবং মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে ৩টি গম্বুজ বিশিষ্ট বিখ্যাত এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন অধিকাংশ এলাকাবাসীর মতে ১৬৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ মসজিদটি।

মসজিদটির অন্যতম আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে মসজিদে তলদেশে ২০ ফুট নিচে রয়েছে ৩ কামরা বিশিষ্ট গোপন ইবাদতখানা। নির্জন পরিবেশে সেখানে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মাওলানা আবদুল্লাহ। মসজিদটির ভিটির উচ্চতার ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। মসজিদের সম্মুখের ঝাঝীর্ণ মিনারটির উচ্চতা ২৫ ফুট। কথিত আছে, মসজিদের নির্মাণ কাজ মাওলানা আবদুল্লাহর কিছু জ্বীন শিষ্য রাতের আধারে সম্পন্ন করত। তাই এই ঐতিহাসিক মসজিদটি জ্বীনের মসজিদ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। এলাকাবাসী এখনও বলেন, মসজিদের তলদেশে স্থাপিত পুকুরগুলোতে জ্বীনেরা গোসল করত, তারা এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ জিকির-আজকার অন্যান্য ইবাদত করত। এমনকি গভীর রাতে জিকিরের আওয়াজ অনেক দূর পর্যন্তভেসে আসত।

ঐতিহাসিক এই মসজিদটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮/৯ শ’ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ্ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এই মসজিদটির নান্দনিক রূপায়ন ও অদ্ভুত অবকাঠামো এবং শৈল্পিক অবয়বের দিক থেকে এটি লক্ষ্মীপুর জেলার একটি প্রাচীন নিদর্শন। এর নিমাণ কৌশল ও স্থাপত্যকলা দেখতে হাজার হাজার দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে। মসজিদটি রায়পুরের কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। মসজিদটি এলাকায় ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ বলেও পরিচিতি রয়েছে। তবে মসজিদের সামনে সিঁড়ির কাছে লাগালো শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদের নাম ‘মসজিদ-ই-আবদুল্লাহ।